বিশেষ প্রতিবেদন:শক্তি বাড়িয়ে ক্রমে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে আমফান। এখন প্রকৃতি অনুযায়ী সেই ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। আর ক্রমে এগিয়ে আসছে পশ্চিমবাংলার দিকেই। তবে তার অভিমুখ কাকদ্বীপ থেকে সরে গিয়েছে দিঘার দিকেই। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে বলেন, ‘আমি সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি। কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সব রকম সাহায্য দেওয়ার জন্য তৈরি রয়েছে।’ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ১৮ থেকে ২১ মে পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগরে রয়েছে আমফান। বর্তমানে এই ঝড় দিঘা থেকে দক্ষিণে এবং দক্ষিণ–পশ্চিমে ৮৮০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। দিঘা এবং সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ঝড়টি যখন যাবে, তার গতি হবে ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটারের মতো। আর দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলির পাশাপাশি কলকাতার ওপর দিয়ে গেলে তার গতি থাকবে ঘণ্টায় প্রায় ১৬৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার। তার আগে এদিন বিকেলেই দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়ে দেয়, ঝড়টি ওডিশার পারাদ্বীপ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
আমফান যে গতিতে এগিয়ে আসছে, তাতে পশ্চিমবাংলার উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। সোমবার সন্ধে নাগাদ এই সতর্কবার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাড়ি–ঘরের ক্ষতি হতে পারে, গাছপালা উপড়ে পড়তে পারে, রেল ট্রাকে বা ইলেকট্রিক লাইনেও অনেক ক্ষতি হতে পারে। এনডিআরএফের তরফে এস এন প্রধান জানিয়েছেন, পশ্চিমবাংলার উপকূলেই এই ঝড়ের আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমফানের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার মধ্যেই ঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বুধবার পশ্চিমবাংলার আবহাওয়া অত্যন্ত খারাপ থাকবে। ঝড়ের প্রভাব তীব্র থাকবে কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়ায়।
তবে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা রিভিউ মিটিংয়ের পর কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়, উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে আমফানের গতিবেগ সামান্য দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবুও বুধবার বিকেল নাগাদ পশ্চিমবাংলার উপকূলে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হয়েই আছড়ে পড়তে পারে এই আমফান। এদিন বৈঠকটি হয় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকরা। ছিলেন আবহাওয়া দফতরের কর্তারাও। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ঝড় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান।
এদিকে, সোমবার আমফান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক প্রোটোকল না মেনে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘ওই বৈঠক হয়েছে রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে। রাজ্যকে না জানিয়েই রেসিডেন্ট কমিশনারকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। এটা অসৌজন্যের বিষয়।’ কিন্তু কথা হল, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কথা হয়েছে। রাজ্যকে সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সচিব। ঝড়ে বিপর্যয়ের মোকাবিলায় রাজ্যের ৬ জেলায় প্রস্তুত রয়েছে এনডিআরএফ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ ও কাকদ্বীপে এবং তার বাইরেও এনডিআরএফ মোতায়েন রয়েছে।
কলকাতার খবর: ঝড়ের মোকাবিলা করতে কলকাতা পুরসভা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। সোমবার বিষয়টি নিয়ে পুরসভায় জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে বিপর্যয় মোকাবিলায় একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে বলেও পুরসভা সূত্রে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে বলে ফিরহাদ জানিয়েছেন।